জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম:
রমজানের শুরুতেই চট্টগ্রামেও বেড়েছে ভোগ্যপণ্যের দাম। কাঁচাবাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে লেবু, শসা, বেগুনসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী। পাশাপাশি স্বস্তি মিলছে না ছোলা, ডাল, মাছ, মাংসের বাজারেও। দাম বাড়ানোর পেছনে ব্যবসায়ীদের সেই পুরনো অজুহাত।
ক্রেতারা বলছেন, দাম বাড়ানোর পুরনো অজুহাত শুনতে শুনতে তারা ক্লান্ত। এখন এই বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন তারা। প্রতিদিনই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের বাহানার শেষ নেই। আর রোজায় সেই বাহানার গায়ে তো রীতিমতো ডানা গজায়।
নগরের কর্ণফুলী ও কাজীর দেউড়ি কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইফতারি তৈরির উপাদান গাজর, বেগুন, শসা ও লেবুর দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সে সঙ্গে ছোলার কেজিতে ১০ টাকা ও ডিমের ডজনে ১০ টাকা বেড়েছে। একইসঙ্গে রোজাকে ঘিরে সপ্তাহের ব্যবধান মুরগির কেজিতে ১৫ ও গরুর মাংসের কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা।
রোজায় লেবুর চাহিদা বাড়ে। ইফতারের সময় লেবুর শরবত সকলের পছন্দ। চাহিদা বাড়ায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে লেবু। সপ্তাহের ব্যবধানে লেবুর হালিতে বেড়েছে ২০ টাকা। গতসপ্তাহে মাঝারি ও ছোট মানের লেবু হালিপ্রতি ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে বড় লেবু হালিতে ২০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে প্রতিকেজি গাঁজর ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। গতসপ্তাহে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া শসার দাম ঠেকেছে ৬০ টাকায়। গোল বেগুন কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা, টমেটো ও পেঁপের কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তাছাড়া বাজারে প্রতিকেজি বরবটি ৮০, শিম ৬০, পটল ৮০, মুলা ৫০, মিষ্টি কুমড়া ৪০, ফুলকপি ৫০, ঢেঁড়শ ও তিত করলা ৯০, লতি ৬০, চিচিঙ্গা ৬০, ঝিঙ্গা ৮০ ও কাঁচাকলা হালি প্রতি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নগরের কাজীর দেউড়ি কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. এরশাদ সিভয়সকে বলেন, শীতের মৌসুম শেষ। তাই বাজারে এখন শীতকালীন সবজি কম। পাশাপাশি রমজানে গাজর, বেগুন, শসা ও লেবুর চাহিদা বাড়ে। সে হিসেবে সরবরাহ কিছুটা কম। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে।
এদিকে ইফতারে আরেকটি প্রয়োজনীয় উপাদান ছোলা। সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ১০ টাকা। বর্তমানে প্রতিকেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯০ থকে ৯৫ টাকায়। তবে চিনি বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দরেই। বর্তমানে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলও বিক্রি হচ্ছে আগের ১৮৫ টাকা দরে। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে মোটা দানার মসুর ডাল ১১০ টাকা ও ছোট দানার মসুর ডাল ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি খোলা আটা ৫৮ টাকা ও প্যাকেটজাত আটা ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ এবং দেশি রসুন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিলিটার রুহ আফজা বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকায়।
এদিকে রোজাকে পুঁজি করে অস্থির মাছ-মাংসের বাজারও। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬৫ টাকা, কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে সোনালী মুরগি ৪০০ টাকা, কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে দেশি মুরগি ৫৫০ টাকায় বিকিও হচ্ছে। পাশাপাশি ডিমের ডজনে ১০ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে হাড়ছাড়া গরুর মাংসের ৯শ ও হাড়সহ গরুর মাংস ৮শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খাসির মাংস আগের ১১শ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে স্বস্তি মিলছে না মাছের বাজারেও। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে রুই ও কাতলা মাছ ৩শ, কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে পাঙাশ ১৮০ ও তেলাপিয়া ২২০, কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে কই মাছ ৩শ, গলদা চিংড়ি ৬শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ১শ টাকা বেড়ে শোল ৫৫০ থেকে ৬শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজির হোসাইন বলেন, ‘রোজা আসলে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছেন। আর সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন। তাই শুধু জরিমানা নয়, আমদানি থেকে খুচরা পর্যায় পর্যন্ত কঠোর তদারকি হওয়া উচিত।’
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক বলেন, ‘রোজার মাসে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘বাজারে পণ্যের অভাব নেই। রমজানে ক্রেতাদের হুড়োহুড়ি করে এক সাথে অধিক পণ্য ক্রয় না করার অনুরোধ জানাচ্ছি। বাজারে পণ্যের কোনও সংকট হবে না।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।